প্রকাশিত: Tue, May 28, 2024 3:48 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:16 AM

মিশেল ফুকো : জ্ঞান ও চিন্তার প্রত্নতত্ত্ব

মঈন চৌধুরী

মিশেল ফুকো চিন্তা করেন এবং বলেন, আমরা মানুষ, মানবিকতা মানুষের ধর্ম। এ ধরনের একটা আপাতমহৎ এবং স্বার্থপর দর্শনকে চিন্তা-চেতনায় রেখে আমরা চালু রেখেছি ক্ষমতার আয়োজন ও শোষণের সামাজিক প্রক্রিয়া। যদিও আমরা জানি, এ বিশ্বে অনেক অনেক কাল আগে থেকেই অবস্থান করছে প্রাণীরা, পশুরা, মাছেরা, বৃক্ষেরা, বস্তুরা এবং মানুষেরা, তবু এই অতি সাম্প্রতিককালেই আমরা আবিষ্কার করেছি মানুষকে, আর মানুষের ওপরে আরোপিত মানবত্ব আমাদের সাহায্য করছে যুক্তি/অযুক্তি, স্বাভাবিক/উন্মাদ, ক্ষমতা/অক্ষমতা ইত্যাদির মতো যুগ্ম-বৈপরীত্যগুলোর ইচ্ছেমতো ব্যবহার।

রেনেসাঁস পরবর্তী ক্লাসিকাল যুগ থেকেই আমরা অযথা নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছি যুক্তির আবর্তে এবং অযৌক্তিক উন্মাদকে নিক্ষেপ করেছি উন্মাদ আশ্রমে। অক্ষমকে মানবতার মিথ্যা বানী শুনিয়ে করেছি শোষণ। হঠাৎ করে হয়ে ওঠা এই মানুষ সৃষ্টি করেছে চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, সমাজসংস্কারক, আমলা, শান্তিরক্ষা বাহিনী, দেশরক্ষা বাহিনী নামক কতক ক্ষমতালিপ্সু শ্রেণী এবং এখনো এই শ্রেণীগুলোই বিভিন্ন নামে ও নকশায়, যুক্তি ও অযুক্তির সীমারেখা টেনে, শোষণ করছে সমাজকে। সত্যিকার স্বাধীন সত্তার মানুষকে বন্দি হতে হয়েছে কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধি-নিষেধের কারাগারে, যা যৌক্তিকভাবে তুলনীয় হতে পারে অযৌক্তিক সত্য-সত্তার জন্য সৃষ্ট উন্মাদ  আশ্রম কিংবা সর্বদ্রষ্টা প্যানঅপটিকান কারাগারের সাথে। প্রকৃতির কিছু দ্বন্দ্ব ও ডায়ালেকটিক্স কেন্দ্র করে উনিশ শতকে মানুষ সৃষ্টি করেছে মনোচিকিৎসার এক রূপকথার জগৎ, যার প্রেক্ষাপটে রয়েছে জ্ঞান ও ক্ষমতানির্ভর এক বিশেষ ক্ষমতাকাঠামো। জ্ঞান ও ক্ষমতা যে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, এ সত্য প্রকাশ পেয়েছে তথাকথিত যৌক্তিক মানবিক কর্মকান্ডে। জ্ঞান আর ক্ষমতার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়েছে যৌনতা ও যৌন অনুষঙ্গ। আজকের শিকড়হীন মানুষের চিন্তার ইতিহাসও আসলে এক ব্যর্থতার ইতিহাস। প্রত্নতাত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ইতিহাসের কোনো ধারাবাহিকতা নেই, জ্ঞানতত্ত্বেও নেই কোনো যুক্তির স্রোত। আসলে যা আছে তা হলো চিন্তাশৃঙ্খলের কিছু বিচ্ছিন্ন জ্ঞানাণু বা এপিস্টেম আর ইতিহাসকেন্দ্রিক কিছু বিভিন্ন দেশ-কালচ্যুতির লক্ষণ। সময়ের সাথে এপিস্টেম বদলেছে বারবার আর জ্ঞানচর্চা বাধাগ্রস্ত হয়েছে ধারাহীন ইতিহাসের মানবত্ব আরোপণের উদ্ভ্রান্ত প্রচেষ্টায়। জ্ঞানতত্ত্ব ও ইতিহাস সৃষ্টিতে মানুষের ভাষাও পালন করেছে  উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। সামাজিক মৌখিক ভাষা তার ক্রিয়া-কর্ম শেষে যখনই শুধুমাত্র উক্তি বা ংঃধঃবসবহঃ-এর রূপ নিয়েছে, ঠিক তখনই নতুন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থসহ তৈরি করেছে নতুন এপিস্টেমের। মানুষ, মানুষের জ্ঞান আর ইতিহাস এগুচ্ছে এভাবেই। মিশেল ফুকো তাঁর দর্শনে কিছু মৌলিক সমস্যাকে তুলে ধরলেও কোনো সমাধান দেননি। আর এ জন্য ফুকোর দর্শনকে অনেকে হরযরষরংঃরপ বলে চিহ্নিত করতে চান। তবে বর্তমান সময়ের দর্শনে মিশেল ফুকোর চিন্তা-চেতনাকে বারবার আনতেই হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ফুকোর দর্শন ফেসবুকে তুলে ধরা সম্ভব নয়। পাঠক যদি মিশেল ফুকো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান তবে ফুকো রচিত গধফহবংং ধহফ ঈরারষরুধঃরড়হ, ঞযব ঙৎফবৎ ড়ভ ঞযরহমং, অহ অৎপযবড়ষড়মু  ড়ভ কহড়ষিবফমব, উরপরঢ়ষরহব ধহফ চঁহরংয, ঞযব ইরৎঃয ড়ভ চৎরংড়হ, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঝবীঁধষরঃু শিরোনামের বইগুলো পড়ে দেখতে পারেন। ফেসবুক থেকে